গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা বলে

বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে। গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা বলে। গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে থাকে। জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে থাকে। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কথা বলে

গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন বা ক্ষমতা


গণতন্ত্র বলতে জনগণের শাসনকে বুঝায়। গণতন্ত্র বা Democracy শব্দটি গ্রিক শব্দ Demos এবং Kratia শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। Demos শব্দের অর্থ জনগণ এবং Kratia শব্দের অর্থ শাসন বা ক্ষমতা। সুতরাং শব্দগত বা উৎপত্তিগত অর্থে গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন বা ক্ষমতা। সাধারণভাবে গণতন্ত্রে শাসন ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে।

গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের এমন একটি শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। এ ব্যবস্থায় আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহনের সমান সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

খৃস্টপূর্ব ৫ম শতকে এথেন্স ও অন্যান্য গ্রিক নগররাষ্ট্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝাতে শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয়। প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ে শহর-রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার দেয়া হয়। সাধারণভাবে এই ঘটনাকেই গণতন্ত্রের প্রথম উন্মেষরূপে গন্য করা হয়। পরে নাম হয় ডেমক্রেশিয়া যার অর্থ হচ্ছে জনগণের শক্তি।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। খৃস্টপূর্ব ৪২২ সালে ক্লিয়ান ডেমোক্রেসিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে- That shall be the democratic which shall be the people, for the people. এর অনেক পরে আব্রাহাম লিঙ্কন ঠিক এমনই এক জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করেন এভাবে- Government of the people, by the people, for the people. অর্থাৎ- গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।

আধুনিক গণতন্ত্রকে দুটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয় যেমন, তাদের নিজস্ব সমাজে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা ও একইভাবে আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা তাদের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি। গণতন্ত্র সাধারণত প্রাচীন গ্রিক এবং রোমানদের সাথে জড়িত, যাদেরকে ১৮ শতাব্দীর বুদ্ধিজীবীরা পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচনা করেন।

আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রগুলি সামাজিক চুক্তি যা কিনা নাগরিকদের অধিকার দেয়, রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস করে এবং ভোটাধিকারের অধিকার দেয়। সাম্প্রতিক দশকগুলির পণ্ডিতরা এই সম্ভাবনাটি সন্ধান করেছেন যে প্রথমে গণতান্ত্রিক সরকারের দিকে অগ্রগতি অন্য কোথাও ঘটেছিল কারন গ্রীসের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিকাশ মিশর এবং নিকট প্রাচ্যের সভ্যতার অনেক পরে ঘটেছিল।

আদি গণতান্তিক সমাজসমূহ


প্রাচীন এথেন্সে প্রায় ৪০৮ খৃষ্টপূর্বাব্দে সরকারের রূপ হিসাবে গণতন্ত্র এবং সংবিধানের ধারনার উৎপত্তি হয়েছিল। প্রাচীন গ্রীসে বিভিন্ন ধরনের সরকার চালিত নগর রাজ্য ছিল, গণতন্ত্রের পাশাপাশি অভিজাতদের দ্বারা অভিজাততন্ত্র, একক ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা রাজতন্ত্র, স্বৈরাচারী দ্বারা স্বৈরতন্ত্র ইত্যাদি শাসন ব্যবস্থারও প্রচলন ছিল।

প্রাথমিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের আরেকটি নিদর্শন আসে ভারতের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র, সংঘ এবং গণ থেকে। যা খ্রস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে শুরু করে কিছু কিছু অঞ্চলে চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। একজন গ্রিক ঐতিহাসিক ডায়োটরাস লিখেছেন, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি ভারতে বিদ্যমান ছিল। সেই যুগে ১৬ টি শক্তিশালী এবং বিস্তৃত রাজত্ব এবং প্রজাতন্ত্র ছিল।

গণের মূল বৈশিষ্ট্য হল এটি একজন সম্রাট বা রাজা এবং একটি সুচিন্তিত সমাবেশ নিয়ে গঠিত ছিল। এটি রাষ্ট্রের সমস্ত বড় সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে আলোচনা করত। মুক্ত পুরুষদের জন্য সভার দ্বার উম্মুক্ত ছিল। এই সংস্থাটির পূর্ণ আর্থিক প্রশাসনিক এবং বিচারবিভাগীয় অধিকার ছিল। অন্যান্যরা সভার সিদ্ধান্ত মেনে নিতেন। গণ দ্বারা নির্বাচিতরা সর্বদা ক্ষত্রিয় বর্ণের হত।

প্রাচীন গ্রিস প্রথমদিকে পোলিস নামক স্বাধীন নগররাষ্ট্র নিয়ে সৃষ্ট একটি আলগা সমষ্টি ছিল। এই পোলিসগুলির মধ্যে অনেকগুলিই ছিল গোষ্ঠী শাসনতন্ত্র নির্ভর। সর্বাধিক বিশিষ্ট গ্রিক বহুতন্ত্র এবং যে রাষ্ট্রের সাথে গণতান্ত্রিক এথেন্সের প্রায়শই তুলনা করা হয় তা ছিল স্পার্টা। কিংবদন্তি আইনপ্রণয়ক লাইকারগাস স্পার্টায় যে সংস্কার করেন তা গ্রিসের নগর রাজ্যগুলি থেকে পৃথক করে তুলেছিল।

সামগ্রিকভাবে স্পার্টাবাসীরা তাদের রাজাদের সমালোচনা করতে পারতেন এবং তারা তাদের ক্ষমতাচ্যুত ও নির্বাসিতও করতে পারতেন। তারপরও কিছু সমালোচনা আছে যেমন- সকলকে পোলিসের জনসেবাতে নিযুক্ত থাকতে হত এবং বিভিন্ন সরকারী সংস্থাগুলির মধ্যে গেরোসিয়াই ক্ষমতার বৃহত্তম অংশটি দখল করে রেখেছিল।

পারস্য যুদ্ধের পরে এথেন্স গ্রিক বিশ্বে আধিপত্যবাদী শক্তি হয়ে দেখা দিয়েছিল এবং স্পার্টা ও এথেন্সের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে মতপার্থক্য শুরু হয়। ফলে একাধিক সশস্ত্র সংঘাতের সূত্রপাত ঘটে। স্পার্টা শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। যুদ্ধের ফলে উভয় পোলিস এবং স্পার্টা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে লিউকট্রার যুদ্ধে ৩৭১ সালে থেবেস স্পার্টাকে পরাজিত করে। কয়েকবছর পর এ সবের অবসান হয়।

এথেন্সকে সাধারণত গণতন্ত্রের জন্মস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসাবে দেখা হয়। এথেন্সের গণতন্ত্র সম্পর্কে বহু শতাব্দী জুড়ে বিস্তৃত রচনা আছে যেমন- প্লেটোর রিপাবলিক, এরিস্টটলের পলিটিকস ইত্যাদি। এথেন্স খৃস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে একটি প্রভাবশালী ও শক্তিশালী অভিজাততন্ত্র হিসাবে উদয় হয়।

এথেন্সে দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে জনগণ পরিচালিত হত। প্রথমত যারা সরাসরি রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নিত তাদেরকে নাগরিক বলে বিবেচনা করা। দ্বিতীয়ত তাদের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করা ছিল বাধ্যতামূলক। আর মহিলা, শিশু ও বিদেশিদের নাগরিক বলে বিবেচনা না করা। এথেন্সের রাজনীতি ছিল মূলত নগর রাষ্ট্র কেন্দ্রীক। ফলে সে সময়ের গণতন্ত্র ছিল প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র।

গ্রিক সভ্যতার বিলুপ্তির পর নগর রাষ্ট্র থেকে যখন বৃহৎ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সব নাগরিকের রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর তখনই শুরু হয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। এ গণতন্ত্রে জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিতরা জনগণের পক্ষে কাজ করে থাকে। যদিও অনেক দেশে গণতন্ত্র এখন হুমকির মুখে।

গণতন্ত্রের প্রকারভেদ


এক. প্রত্যক্ষ বা বিশুদ্ধ গণতন্ত্র হচ্ছে যে শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকগণ প্রত্যক্ষ বা সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনার সুযোগ পায়। প্রাচীন গ্রিসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রগুলিতে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র প্রচলিত ছিল। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহন, বিচার কার্য, কর ধার্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করত।

দুই. পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বলতে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করার পদ্ধতিকে বোঝায়। এ পদ্ধতিতে সাধারণত নাগরিকগণ সরাসরি শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করেন না। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই আইন প্রণয়নসহ শাসনকার্যের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রই প্রচলিত আছে।

গণতন্ত্রের দোষ-গুণ


গণতন্ত্রে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হওয়ায় জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকে। স্বৈরাচারী পন্থায় নিয়ন্ত্রণ, নিপীড়ন এ ব্যবস্থায় কাম্য নয়। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারণে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়। জনগণের বাক স্বাধীনতার ফলে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার সৃষ্টি হয়। জনগণের সরকার হওয়ায় জনগণের আস্থা হারালে এ সরকার টিকে থাকতে পারে না।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বেশকিছু সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি আছে। প্লেটো ও এরিস্টটল গণতন্ত্রকে মুর্খ ও অযোগ্যের শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করেছেন। গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে অজ্ঞ, অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিও শাসন ক্ষমতায় আসতে পারে। ফলে গণতন্ত্রের উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। সংখ্যা লঘুদের অভিযোগ সম্পর্কে সরকার উদাসীন থাকে।

গণতন্ত্রে বহুমত ও ধারনা থাকার কারনে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে জাতীয় সংহতি বিনষ্ট হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় ব্যর্থ হলে জাতি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে। অনুন্নত দেশের সরকারি দলগুলি নিজ দলের স্বার্থে দেশ পরিচালনা করে। ফলে গণঅসন্তোষ দেখা দেয়। গণতন্ত্র অনেক ব্যয়বহুল শাসনব্যবস্থা।

গণতন্ত্র ও নির্বাচনের সম্পর্ক


গণতন্ত্রের একটি মৌলিক বিষয় হলো নির্বাচন। জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন পরিচালনার জন্য নির্বাচনের বিকল্প নাই। রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভোটদানের মাধ্যমে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে। তাই বলা হয় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধমে জনগণ পূর্ববর্তী সরকার ও দলকে প্রত্যাখান করতে পারে। যে সরকার বা দল জনমতের বিরোধিতা করে তার বা তাদের প্রতি জনগণের আস্থা থাকে না। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণ তাদের জবাব প্রদান করে। সুতরাং নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে বৈধ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের সম্পর্ক আছে। গণতন্ত্র জনগণের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়।

কোন দেশে গণতন্ত্র না থাকার লক্ষণ সমূহ


১. প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন : নির্বাচন হলো গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা। সে নির্বাচন হবে অবাধ ও স্বচ্ছ। ত্রুটিপূর্ণ বা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হচ্ছে অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের লক্ষণ।

২. একনায়করাও নির্বাচন করে : যে সব দেশে বেসামরিক একনায়কতন্ত্র আছে সেখানেও নিয়মিত নির্বাচন হয়। তারা নানা কৌশলে প্রতিদ্বন্দিকে নির্বাচনে অযোগ্য করে দেন এবং নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।

৩. জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা : একটি সরকার নির্বাচিত হলেই গণতান্ত্রিক হয় না। গণতন্ত্র না থাকলে এবং একনায়কতন্ত্রের আবির্ভাব হলে জনমতকে সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা করা হয়।

৪. ভোটার অংশগ্রহণ কমে যাবে : যে দেশে গণতন্ত্র থাকেনা সেখানে নির্বাচন হলেও ভোটাররা ভোট প্রদানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। জনগণ ভোট কেন্দ্রে যায় না।

৫. সংসদ হবে একদলীয় : একটি দেশ যখন গণতন্ত্র থেকে বিচ্যুত হবার দিকে ধাবিত হয় তখন সংসদে ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকে। সংসদে কার্যত কোন বিরোধী দল থাকে না।

৬. নিরাপত্তা বাহিনীর প্রভাব : দেশে গণতন্ত্র না থাকলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো নানা ধরনের আইন-বহির্ভুত কাজে জড়িয়ে পড়ে। শাসক গোষ্ঠী এই বাহিনীকে মানুষকে দাবিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করে।

৭. দুর্বল প্রতিষ্ঠান : নির্বাচন কমিশন, সংসদ, বিচার বিভাগ এগুলো ভঙ্গুর অবস্থার দিকে অগ্রসর হলে বুঝতে হবে সে দেশে গণতন্ত্র নাই।

৮ মত প্রকাশে ভয় পায় : গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে মানুষের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয় এবং সংবাদ মাধ্যমও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না।

৯. দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া : প্রতিপক্ষকে ক্রয় করার জন্য দুর্নীতির বিস্তার ঘটে। শাসকদের অনুগত হবার বিনিময়ে তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেয়। আবার আনুগত্য না দেখালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

১০. ক্ষমতা হারানোর ভয় : একনায়ক শাসকরা ক্ষমতা হারানোর পর একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং প্রতিপক্ষ প্রতিশোধ নিতে পারে মনে করে ভয়ে থাকে।

গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্তাবলী


গণতন্ত্রকে যথাযথভাবে সফল ও জনকল্যাণমূলক করতে হলে কতগুলো বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। এগুলো পরিপূর্ণভোবে বাস্তবায়ন ছাড়া গণতন্ত্রকে কার্যকর করা যায় না। যেমন-

১. গণতান্ত্রিক পরিবেশ : গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশের বিকল্প নাই। মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই এ পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে।

২. সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল : গণতন্ত্রের ভিত্তি জনমত। এ জনমত গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে রাজনৈতিক দল। তাই গণতন্ত্রের সফলতার জন্য সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল অপরিহার্য।

৩. শিক্ষা প্রসার ও সুনাগরিক : শিক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে উঠে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয়। শিক্ষার প্রসারের ফলে সুনাগরিক সৃষ্টি হয় না যা গণতান্ত্রিক সফলতার জন্য অনস্বীকার্য।

৪. সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব : সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন। তাই গণতান্ত্রিক সাফল্যের জন্য সুযোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব অপরিহার্য।

৫. আইনের শাসন : গণতন্ত্রের সফলতার জন্য অন্যতম শর্ত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইনের চোখে সবাই সমান এ নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৬. স্বাধীন বিচার বিভাগ : স্বাধীন বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। কেবল বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেই বিচার বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

৭.ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে তৃণমূল পর্যায়ে জনগনের মাঝে সরকারের সুযোগ-সুবিধার সুষম বন্টন সম্ভব হয়।

গ্রিক দর্শনিক এরিস্টটল গণতন্ত্রকে অযোগ্যের শাসন বলে আখ্যায়িত করলেও বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্রই সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। কারন মানুষের মনে দৃঢ় বিশ্বাস যে, গণতন্ত্র তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, সাম্য নিশ্চিত হবে এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গণতন্ত্রকে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করছে যা কাম্য নয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url